akshay kumar dutta

অক্ষয়কুমার দত্তের স্মৃতিধন্য শোভনোদ্যান রক্ষায় আমজনতার অঙ্গীকার

বালি শহরে অক্ষয়কুমার দত্তের স্মৃতি বিজড়িত শোভনোদ্যানের রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন হাজার হাজার মানুষ। তারা অনেকেই বালির বাসিন্দা। আবার অনেকেই থাকেন অন্যত্র। ১৫ জুলাই অক্ষয়কুমার দত্তের ২০৫ তম জন্মতিথিতে তাঁরা অবশ্য সকলেই শপথ নিলেন একই মন্ত্রে। তা হল, যে কোনও মূল্যে তাঁরা শোভনোদ্যান -এর দখলদারির চক্রান্ত ঠেকাবেন। সহস্র কন্ঠে একই সুরে তাঁদের প্রতিজ্ঞা সর্ব শক্তি দিয়ে তাঁরা শোভনোদ্যান -এর দরজাতেই প্রোমোটার চক্রের বুলডোজার রুখে দেবেন। 

এদিন বিকেলে বালির দেওয়ান গাজী চত্বরে শোভনোদ্যান -এর গেটের সামনে  বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও অক্ষয়কুমার দত্ত মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের (বালি) উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল এক মহতী সভার। যা, আয়োজক ও নানা সুধীজনের কথায়ভারতের নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ অক্ষয়কুমার দত্তের স্মৃতি তর্পনে নেহাতই শুধু একটি আলোচনাসভা নয়, এক প্রতিবাদসভাও বটে। কেন প্রথম সারির হেরিটেজ তালিকাভুক্ত শোভনোদ্যান -এর মতো একটি প্রাচীন ভবনকে যাবতীয় নিয়মবিধি ভেঙে নির্বিচারে প্রোমোটার- সিন্ডিকেট রাজ কুক্ষিগত করবে, সেই ন্যায্য প্রশ্ন তুলে “প্রতিবাদ”। 

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় বলেনরাজ্য হেরিটেজ কমিশনের স্বীকৃতি সত্ত্বেও বাংলার বুক বহু হেরিটেজ ভবন হারিয়ে যাচ্ছে। কার্যত সেগুলি লুঠ হয়ে গিয়েছে। যেমন, ডিরোজিও এর বাড়ি বা মধু কবির বাড়ি। এই সব হারিয়ে যাওয়া হেরিটেজ ভবনের তালিকাটি রীতিমত দীর্ঘ। এমন সব ভবনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই আইনি দলিলের খোঁজই মিলছে না। আসলে সেগুলি সরকারি দপ্তর থেকেই হাপিস হয়ে গিয়েছে।  তাঁর মতে, অক্ষয় দত্তের বাড়িও অনেক আগেই হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে। আসলে এই বাড়ি রক্ষার দ্বায়িত্ব কিন্তু অক্ষয়কুমার দত্তের নয়। বস্তুত এই বাড়ি মর্যাদার সঙ্গে রক্ষা না পেলে তা হবে আমাদেরই পরাজয়। সরকারের উচিত এটি অধিগ্রহণ করে অক্ষয় দত্তের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম বানানো। আরও নানা গঠন মূলক কাজে এই জায়গা ব্যবহার করা যেতেই পারে।

অক্ষয়কুমার দত্তের উপর প্রামাণ্য গ্রন্থ আঁধার রাতে একলা পথিক – এর রচয়িতা আশীষ লাহিড়ী মনে করেন, সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে অক্ষয়বাবুর স্মৃতি রক্ষায়। তিনি সাফ বলেন, ” আজ যারা আমাদের এই রাজ্যটি চালাচ্ছে তারা দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। কারণএই বাড়ি হেরিটেজ কমিশনের স্বীকৃতি পেয়েছিল ২০০৬ সালে। তখন যারা রাজ্য চালাতেন, তারা এই বাড়ি নিয়ে নানা জট ছাড়ানোর জন্য কিছুটা সময়  পেয়েছিলেনকিন্তু কিছুই তো করা হয় নি। তিনি এই হেরিটেজ ভবনের ইতিহাসের রক্ষায় বালিরই বাসিন্দা ও এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য অর্ণব চট্টোপাধ্যায়ের দীর্ঘ দিনের গবেষণামূলক কাজেরও ভুয়সী প্রশংসা করেন। 

অন্যদিকে, অক্ষয়কুমার দত্ত মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের (বালি) কর্মকর্তা শঙ্কর মৈত্র বলেন, আমাদের সাফ কথা হেরিটেজ এই ভবন আমরা কোনো মতেই বিলুপ্ত হতে দিচ্ছি না, দেব না। জমি হাঙরদের আমরা রুখবই। 

১৫ জুলাই সভা শুরু হওয়ার আগে বালি বাস স্ট্যান্ড থেকে অক্ষয়বাবুর বাড়ি পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন হয়। এতে সমাজের নানা স্তরের নানা বয়সী মানুষদের অংশ নিতে দেখা যায়। শোভাযাত্রার বাড়তি আকর্ষণ ছিল ব্যান্ড পার্টির বাদ্য যন্ত্রের সুরে দেশাত্মবোধক গান।